টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) (এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম) : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মন্ডপ বেড়েছে ৪২টি। গত বছর ১ হাজার ২৩৮টি পূজা মন্ডপে পূজা হয়েছে। এ বছর ১ হাজার ২৮০টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে মন্ডপে মন্ডপে।
উৎসবের আমেজে জেলার ৫ উপজেলার প্রতিটি মন্ডপে পূজা উৎযাপনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্যে মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন রং তুলির আচরে দেবীমূর্তি ফুঁটিয়ে তোলা হচ্ছে। মন্ডপ কমিটির সদস্যরা আলোকসজ্জা, ঢাকি, পুরোহিত ঠিক করা, মন্ডপ সজ্জাসহ পূজার সরঞ্জাম ক্রয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এখন সাজ সজ্জার কাজ চলছে ব্যাপকভাবে। এবারও পূজার ৫ দিনই মন্ডপে মন্ডপে দেবী বন্দনার পাশাপাশি ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে পূজা শুরু হবে। চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
গোপালগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে,এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি পূজা মন্ডপ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায়। এখানে ৩৪০ টি মন্ডপে পূজার আয়োজন চলছে। এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩১৫ টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৯৮টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৩টি এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯৪ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিমা শিল্পী রনজিৎ পাল বলেন, এবছর ৬টি প্রতিমার কাজ করছি। এ দিয়ে যা আয় হবে তা দিয়েই সারা বছর সংসার চলবে।
প্রতিমা শিল্পী রথীন্দ্র নাথ পাল বলেন, এ বছর কাজের চাপ বেশি। ১০ টি প্রতিমা তৈরির বায়না পেয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর এ জেলায় বেশি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কোটালীপাড়া উপজেলার সহ¯্র বছরের ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধান্ত বাড়ি সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ লাল দাস বলেন, উৎসবের আমেজে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এখানে প্রতিমা, মন্দির থেকে শুরু করে সর্বত্রই সাজসাজ রব থাকবে। আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতি বছরের মতো এ বছরও হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটবে এ মন্দিরে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ অসিত কুমার মল্লিক জানান, গত বছর এ জেলায় ১ হাজার ২৩৮ টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ বছর ১ হাজার ২৮০ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে এ বছর ৪২ টি বেশি পূজা হচ্ছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবেন। সেই সাথে আইন-শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনী আগের মত এ বছরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেদিয়ে গোপালগঞ্জে সাড়ম্বরে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা পূজার প্রস্তুতি সভা করেছি। সেখানে আমরা মন্দির কমিটির সভাপতি সম্পাদকদের সরকারি নির্দেশনা জানিয়ে দিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব মুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাত ৮ টার মধ্যে সমন্ত অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। দশমির দিন সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন বলেন, পূজার আগে থেকেই আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছি। মন্ডপ পরিদর্শণ করেছি। এছাড়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে আমরা পূজার প্রস্তুতি সভা করেছি। সম্প্রীতির মধ্যে দিয়েই গোপালগঞ্জে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হবে।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনী নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া উৎসব মুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করতে আমরা পৃথকভাবে প্রস্তুতি সভা করেছি। প্রতিটি থানাও পূজার প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। সবর সহযোগিতায় এ বছরের পূজা উৎসব মুখর পরিবেশে সম্পন্ন হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের পূজারী অখিল বৈদ্য বলেন, গত ২ বছর করোনার কারণে পূজায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হয়েছে। এ বছর করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমেছে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নিদের্শনা মেনেই আমরা উৎসব মুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করব।